নিজস্ব প্রতিবেদক ::
সচরাচর শীতমৌসুমে বন্যহাতি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালায়। এ সময় হাতির দল মানুষের বসতবাড়ি, জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ছাড়াও অসংখ্য মানুষের প্রাণ নিয়ে যায় প্রতিবছর। প্রতিনিয়ত বনউজাড় এবং হাতির আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে পাহাড়ঘেঁষা লোকালয়ে হানা দিয়ে ক্ষতি করে আসছে বন্যহাতি। এরইমধ্যে একমাস হতে চললো শীতমৌসুম বিদায় নিয়েছে। এর পরও গত রবিবার ভোররাতে তিনটি বন্যহাতি হানা দিয়েছে পাহাড়ি এলাকা থেকে অনেক দূরে চকরিয়ার কোনাখালীতে।
অনুসন্ধান এবং সংশ্লিষ্টদের কথা বলে জানা গেছে, এই তিন হাতি মূলত এসেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকার পেকুয়ার শীলখালী জারুলবুনিয়ার পাহাড়ি পথ ধরে। পথিমধ্যে তাদের পুরোনো চলাচল পথে বাঁধা পেয়ে এসব হাতি দিকভ্রান্ত হয়। কারণ হাতির ওই চলাচল পথে বর্তমানে নির্মিত হচ্ছে দোহাজারি টু কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন। রেললাইন নির্মাণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে বিশালায়তনের কয়েকফুট উচ্চতার রাস্তা। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতরে নির্মিতব্য ওই উচু পথ মাড়িয়ে হাতিগুলো খাবারের সন্ধানে যেতে পারেনি। তাই দিকভ্রান্ত হয়ে হাতিগুলো রাতের আঁধারে সোজা চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়ন হয়ে কোনাখালীতে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ওখানে গিয়েই সামনের পথে মাতামুহুরী নদী হওয়ায় হাতিগুলো আটকা পড়ে দীর্ঘ ১২ ঘন্টা। তাণ্ডব চালায় কয়েকটি বসতবাড়ি ও ফসলী জমিতে। পরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ওয়াইল্ডলাইফ কর্মকর্তা, বনকর্মচারী ও পুলিশের যৌথ তৎপরতায় হাতিগুলোকে নদী পার করিয়ে নিরাপদে ফের বনের মধ্যে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। প্রসঙ্গত-হাতিগুলো লোকালয়ে ঢুকে পড়লে চারিদিকে আতঙ্ক ছড়ায়। হাতিগুলোকে দেখতে হাজারো নারী-পুরুষের ভিড় পড়ে যায়।
বন্যহাতি বিশেষজ্ঞ সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী এলাকার উচিতারবিল, রিংভংসহ তিনটি বনমৌজায় বন্যহাতির অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু সেই অভয়ারণ্য ধ্বংস করে ফেলায় প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিয়ে জানমালের ক্ষতি করছে। একইভাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার পাশাপাশি চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বন্যহাতির চলাচল পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। এতে খাবারের সন্ধানে বের হওয়া এই তিন হাতি দিকভ্রান্ত হয়ে লোকালয়ে চলে এসেছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারি তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী আরো জানান, এই তিন হাতি চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য এলাকা থেকে খাবারের সন্ধানে বের হয় শনিবার রাতে। কিন্তু এসব হাতি পুরোনো চলাচল পথে বাধা পেয়ে দিকভ্রান্ত হলে একপর্যায়ে প্রথমে চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা এলাকার একটি মাজারের পাশে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে রাত তিনটার দিকে হাতিগুলো চলে আসে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন কোনাখালীর বাঘগুজারা পুরুত্যাখালী এলাকার মাতামুহুরী নদীর তীরে লোকালয়ে।
বনবিভাগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, চুনতি, ফাঁসিয়াখালী ও মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান তথা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়েই নির্মাণ কাজ চলছে রেললাইনের। এসব উদ্যানের প্রায় ২৭ কিলোমিটার এলাকার ২১টি স্থানে রয়েছে বন্যহাতি চলাচলের সক্রিয় পথ। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় ২৭ কিলোমিটার এলাকা বন্যহাতির জন্য বড় ধরনের ফাঁদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ২৭ কিলোমিটারে বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ‘আন্ডারপাস’ ও বক্স-কালভার্টের মতো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে শুধু হাতি নয়, বিপন্ন হবে জীববৈচিত্র্যও। বিপদাপন্ন হাতি ক্ষুব্ধ হয়ে লোকালয়ে নেমে আসতে পারে এবং এতে হাতির সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব আরো বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এস এম গোলাম মাওলা চকরিয়া নিউজকে বলেন, অভয়ারণ্য দিয়ে রেললাইন হলে কী ধরনের ক্ষতি ও সমস্যা হবে, সে ব্যাপারে আমরা দাতা সংস্থা এডিবি ও রেলওয়েকে জানিয়েছিলাম। ওইসময় আমাদের দেওয়া প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে হাতি চলাচলের স্থানগুলোতে আন্ডারপাস বা ওভারপাস তৈরি করার চূড়ান্ত সিন্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক হাতি চলাচলের বিকল্প রাস্তাও তৈরি হচ্ছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, রেললাইন স্থাপনের ফলে বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এডিবি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে দেওয়া প্রস্তাবনা মোতাবেক অভয়ারণ্য এলাকায় আন্ডারপাস বা ওভারপাস তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকাশ:
২০২০-০৩-১৮ ১৪:৩৮:৪৩
আপডেট:২০২০-০৩-১৮ ১৪:৩৮:৪৩
- মেরিন ড্রাইভ সড়কে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক নিহত
- চকরিয়ায় সাবেক এমপি জাফর সাঈদি সহ আওয়ামী লীগের ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় নতুন মামলা
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহী বাস থেকে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার, বিক্রেতা গ্রেফতার
- দুর্নীতির আখড়ায় কক্সবাজার সিটি কলেজ
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- বদরখালী সমিতির ১১টি মৎস্য প্রকল্পের নিলাম নিয়ে বিরোধ
- রামুতে আপন ভাতিজিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
- রামুতে ল্যাপটপ পেলেন ৮০ নারী ফ্রিল্যান্সার
- চকরিয়ায় আওয়ামিললীগ ক্যাডার নজরুল সিণ্ডিকেটের দখলে ৩০ একর বনভুমি:
- চকরিয়ায় শিক্ষা ক্যাডার মনিরুল আলমকে ঘুষের বদলেগণপিটুনি
- চকরিয়ার বিষফোঁড়া সিএনজি-টমটম স্টেশন
- চকরিয়া সদরের বক্স রোড সম্প্রসারণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ
- বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে গেলেন পদত্যাগ করা বিতর্কিত অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম
- চকরয়ার ঠিকাদার মিজান গ্রেফতার, কোটি টাকার ঋণের জেল-জরিমানার দায়ে
- কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে ৭০ ইউপি সদস্যের ‘গোপন বৈঠক’, আটক ১৯
- চকরিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় : কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
- চকরিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ২টি ডাম্পার ও স্কেভেটর জব্দ
- ঈদগাঁও’র নবাগত ইউএনও বিমল চাকমা
- চকরিয়ার সাবেক এমপি জাফর আলম, সালাহউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ৭৩৬ জন আসামী
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- উত্তপ্ত রামু সরকারি কলেজ: অধ্যক্ষ মুজিবের অপসারনের দাবিতে কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে তালা
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
পাঠকের মতামত: